ভোটার তালিকা হালনাগাদে আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে নামছে নির্বাচন কমিশন। এবার প্রায় কোটি ০৫ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হবে বলে ইসি কর্মকর্তাদের ধারণা।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২৩ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে। যাদের বয়স ১৮ হয়নি, কিন্তু ১৬ পেরিয়েছে (২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্ম), তাদের তথ্য নেয়া হবে। ভোটার হওয়ার বয়স হলে তাদের তালিকাভুক্ত করে নেয়া হবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী, চার বছরের তথ্য নিলে ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারির আগে যারা জন্ম নিয়েছেন তাদের তথ্য নেওয়া হবে। আর তিন বছরের তথ্য নিলে ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারির আগে যাদের জন্ম হয়েছে, তাদের তথ্য নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের তালিকায় যুক্ত করা হবে আগামী বছর। এরপর ২১, ২২ ও ২৩ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ হবে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়ে যাবেন।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের পর ২৫ মে থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারিত কেন্দ্রে নাগরিকদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ ও নিবন্ধনের কাজ চলবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদে ৫২ হাজার ৫০০ জন তথ্য সংগ্রহকারী; ১০ হাজার ৫০০ জন সুপারভাইজার ও ৭৮০ জন সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার নিয়োজিত থাকবেন। কবে কোন এলাকায় কোথায় নিবন্ধন হবে তা পরে জানানো হবে।
প্রতিবছর হালনাগাদ করতে গেলে প্রতিবারই জনবল নিয়োগ দিতে হয়। তা ছাড়া কোনো বছর গুরুত্বপূর্ণ কোনো নির্বাচন থাকলে সে বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা কঠিন কাজ হয়ে যায়। যে কারণে ইসি ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যাঁদের বয়স ১৮ হয়েছে বা হবে, তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করবে। এঁদের মধ্যে যাঁরা এখনই ভোটার হওয়ার যোগ্য, তাঁদের ভোটার করে নেওয়া হবে। বাকিদের মধ্যে যখন যাদের বয়স ১৮ হবে, তখন তাঁদের ভোটার করে নেওয়া হবে।
ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে রোহিঙ্গারা যাতে তালিকায় নাম লেখাতে না পারে সে জন্য কড়াকড়ি আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সুপারিশ ছাড়া কাউকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।পরে ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, ৩২ উপজেলায় রোহিঙ্গা রয়েছে। এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সুপারিশ ব্যতীত কাউকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এছাড়া মহিলারা যাতে তথ্য সংগ্রহ ও রেজিস্ট্রেশন করতে পারে সেজন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসলামি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শুক্রবার থেকে মুসল্লিদের ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অনেক মহিলা ছবি তুলতে চান না এ ব্যাপারে ইসলামি ফাউন্ডেশনকে প্রচারণামূলক সভা করে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা যাতে এক জায়গায় বসে তথ্য সংগ্রহ না করে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে যারা চেয়ারম্যান, মেম্বর, মেয়র ও কাউন্সিলর রয়েছেন তারা যাতে ভোটারদের আগ্রহ সৃষ্টি করে সেজন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করেছি। এছাড়া ৬৫ দুর্গম এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, যাতায়াত সহজীকরণ এবং তাদের প্রত্যেকের পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের জন্য আলাদা ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে দশ আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ নেয়া হবে।
সচিব বলেন, বিদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে সেজন্য যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করবেন। ১৩ মে (সোমবার) তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ওয়ার্ডে স্থাপিত নিবন্ধন কেন্দ্রে চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি ও দশ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। এরপর ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।
No comments:
Post a Comment