আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রায় এক কোটি ভোটারের হাতে লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মান ঠিক রাখতে এসব পরিচয়পত্র তৈরির কাজ এখন নির্বাচন কমিশন ভবনেই হচ্ছে। ১৭০ জন কর্মী কাজ করছেন সেখানে। অস্থায়ী এ পরিচয়পত্র দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) দেয়া হবে।
জানা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং বিভিন্ন সময় নিবন্ধিত নতুন ভোটারদের স্মার্ট নয়, লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে চুক্তি অনুযায়ী স্মার্ট কার্ড না পেয়ে সাধারণ পরিচয়পত্র দেয়ার উদ্যোগ নেয় কমিশন। গত বছরের ৮ নভেম্বর স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডকে সাধারণ লেমিনেটিং কার্ড ছাপানোর কাজ দেয় ইসি। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কার্ড সরবরাহ করায় ওই কার্ড নেয়নি কমিশন। এমনকি কিছু কার্ড বিতরণ করা হলেও ইসি পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।
তবে ওইসব জাতীয় পরিচয়পত্র নতুন করে তৈরি করে দেয়ার জন্য একই কোম্পানিকে ১৫ জুলাই আবার দায়িত্ব দেয় ইসি। ২৩ জুলাই থেকে আবার কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এখন নির্বাচন ভবনের নবম তলায় সুশৃঙ্খলভাবে কার্ড তৈরি করছেন তারা।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) আবদুল বাতেন বলেন, ইসির তত্ত্বাবধানে এখন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হচ্ছে। আগে তৈরি করা পরিচয়পত্র নিম্নমানের হওয়ায় নানা চাপ থাকা সত্ত্বেও কমিশন তা গ্রহণ করেনি। এখন কমিশনের নির্ধারিত মান অনুযায়ী কার্ড তৈরি হচ্ছে।
‘ইসির ভবনে এ কাজ হওয়ায় আমরা তদারকিও করতে পারছি। পাশাপাশি স্মার্ট কার্ড তৈরির কাজও চলছে’- যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে স্মার্ট টেকনোলজিসের (বিডি) স্বত্বাধিকারী সঞ্চয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা প্রজেক্ট ক্লোজ করে দেয়ার চেষ্টা করছি। ২৩ জুলাই থেকে কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে ১০ লাখ কার্ডের প্রিন্ট শেষ হয়েছে। গোপালগঞ্জ ও পটুয়াখালী জেলায় ডেলিভারিও দেয়া হয়েছে। বাকি জেলাগুলোর ওয়ার্ক আনডার প্রসেস… (প্রক্রিয়াধীন)। আমরা ডিলে (দেরি) করছি না। রেডি (তৈরি) হলেই কার্ড জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
‘কমিশন টাইম টু টাইম কোয়ালিটি পরীক্ষা করে মাঠে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ঈদের আগেই ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কাজ শেষের চেষ্টা চলছে’- বলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্র না পেয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন তরুণরা। এটি ব্যবহারে এখন পর্যন্ত কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো সেবাই দিতে চাচ্ছে না।
লেমিনেটিং কার্ডের বদলে স্মার্ট কার্ড দেয়ার জন্য ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবের্থার টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইসি। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ৮১৬ কোটি টাকার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নয় কোটি স্মার্ট কার্ড সরবরাহের কথা। কিন্তু তারা সেটা পারেনি।
পরবর্তীতে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পর্যায়ে মাত্র এক কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে সক্ষম হয়। বিল নেয় ৫১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এজন্য ইসি চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে।
এখন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড ছাপানো হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বিধায় এক কোটির বেশি ভোটারকে লেমিনেটিং করা কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ১৮ লাখ।
No comments:
Post a Comment