নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার যাতে কোনো ধরনের বৈঠক না করে সেজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালু্দ্দীন আহমদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিং একথা বলেন তিনি।
এর আগে সকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রির্টার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ইসি সচিবসহ ডিএমপি কমিশনারের বিচার দাবি করা হয়। চাওয়া হয় সচিবের বদলিও।
নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ করবেন কি না- সাংবদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আজকে কমিশন একটি নির্দেশনা দিয়েছে, সবগুলো বিষয় মিলিয়ে সরকারকে আমরা একটা পত্র দেব। সিদ্ধান্ত হয়েছে এরকম- ‘ভবিষ্যতে এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় যাতে অভিযোগ না আসে বিষয়টি যেন নিশ্চিত করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের অধীন হওয়ায় তাদের যাতে অন্য কোনোভাবে ডেকে সভা না করা হয় সেজন্য উদ্যোগ নেবে ইসি। এগুলোর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।
সচিব বলেন, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে নির্বাচন কমিশন তা তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেবে। কর্মকর্তারা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কমিশন তা খতিয়ে দেখবে, তলিয়ে দেখবে, তদন্ত করবে, তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রির্টানিং কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে সভা করা হয়েছে- এট আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবহিত নই। যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে, আমরা খতিয়ে দেখব।
বিএনপির অভিযোগ তাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়ে আসার পথে সাদা পোশাকের লোকজন তাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে- এ অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবহিত নই। আমরা যদি এ বিষয়ে অভিযোগ পাই তাহলে ব্যবস্থা নেব।
নিজের শাস্তি ও বদলির ব্যাপারে বিএনপির দাবির প্রেক্ষিতে সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের যে সিদ্ধান্তগুলো হয়, ওই সিদ্ধান্তের মুখপাত্র হিসেবে ও সাচিবিক দায়িত্ব পালনের জন্য ইসি সচিব কাজ করে থাকে। এখানে নির্বাচন কমিশন সচিবের আলাদা কোনো সত্তা নেই। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব সচিবের। এজন্য ইতোমধ্যে যে সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে, সেগুলো কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত।
পক্ষপাতমূলত আচরণকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান এবং জেলা প্রশাসনে অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপদেষ্টা (মেন্টর) মনোনয়নের তালিকায় তার নাম থাকা নিয়ে সচিব বলে, মন্ত্রিপরিষদ ১৩ নভেম্বর মেন্টর নিয়োগের আদেশটি বাতিল করেছে। জেলাতে মেন্টর নিয়োগের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন জেলায় মেন্টর নিয়োগ করে থাকে।
তফসিল ঘোষণার দিন মেন্টর নিয়োগ করা হয়েছে, তবুও কেন কমিশনকে জানানো হয়নি এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি অভিহিত নই।
বিএনপির অভিযোগ সরকারের কারণে আপনারা রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারছেন না- কেন পারছেন না- আসলে চাপটা কোথায়- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এই পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনাররা নিজেরা বসে নিয়েছেন। এখানে কানো চাপে বা পরামর্শে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রশাসনের রদবদলের বিষয়ে বিএনপির অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে প্রস্তাব কমিশন গ্রহণ করবে না। প্রত্যেকটি অভিযোগ সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। তখন বিষয়টি নির্বাচন কমিশন তদন্ত করবে কি কারণে তার বদলি চায়।
প্রসঙ্গত পুনঃনির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর।
No comments:
Post a Comment